২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ তেঁতুলিয়ার হুলাসুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলছে ২১৫ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে শিক্ষা পাঠদান ব্যহত সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১৫ জন। ছেলে শিক্ষার্থী ৯৫ জন ও মেয়ে ১২০ জন। এদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ক্লাশের ২৮ জন, প্রথম শ্রেণির ৪১ জন, ২য় শ্রেণির ৩৭ জন, তৃতীয় শ্রেণির ৩৫ জন, চতুর্থ শ্রেণির ৩৮ জন ও পঞ্চম শ্রেণির ৩৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম ও সহকারি শিক্ষক জিয়াউর রহমান কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে সহকারি শিক্ষক ফিরোজ মিয়া পিটিআইতে প্রশিক্ষণে রয়েছেন। আগামী মাস নভেম্বরের ১ তারিখে ট্রেনিং শেষে যোগদানের কথা রয়েছে।
জানা যায়, ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে জিন্নাতুন বেগম ও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রুনা লায়লা নামে সহকারী শিক্ষক বদলী হয়ে অন্য বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এর মধ্যে সহকারি শিক্ষক ফিরোজ মিয়া জানুয়ারি মাসে পিটিআইতে ট্রেনিংয়ে যান। এসব কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষক সংকট হলেও কোন নতুন শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি। শিক্ষক অনুপাতে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও দুই শিক্ষক দিয়ে ২১৫ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ে মাত্র দুই স্যার রয়েছে। দুইজন স্যার থাকায় নিয়মিত ক্লাস হয় না এবং ক্লাসের রুটিন অনুসারে আমরা পড়তে পারি না। এমনকি বিদ্যালয়ের পিটিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ঠিকমতো হয় না। তাই শুন্য পদগুলোতে দ্রুত শিক্ষক প্রয়োজন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের ইউনিয়নের হুলাসুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে দুই জন শিক্ষক রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেও কয়েকবার কথা বলেছি। মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়ে ২১৫ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো খুবই কষ্টকর। নিয়মিত পাঠদান না হলে শিক্ষার্থীরা ফলাফলে খারাপ করবে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত শিক্ষক সংকট দূর করা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা রয়েছে। বিদ্যালয়ের ৬ টি শ্রেণিতে ২১৫ শিক্ষার্থীর জন্য এখন মাত্র দুজন শিক্ষকই রয়েছি। দুইজন শিক্ষক ছয়টি শ্রেণিতে পাঠদান করতে গিয়ে খুবই হিমশিম খেতে হয়। এভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় না। আমাকে অনেক সময় প্রশাসনিক কাজে উপজেলা সদর কিংবা বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। এমনকি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম করতে গিয়ে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে করে পাঠদান ব্যাহত হয়। এদিকে বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকায় পাঠদান ব্যহত হওয়ায় অভিভাবকরা অসন্তুষ্ট হয়ে হতাশার কথা জানাচ্ছেন। বিষয়টি বারবার শিক্ষা অফিসার মহোদয়কে জানিয়ে আসছি। দ্রুত যেন শুন্য পদে শিক্ষক দেয়া হয়।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আসলে দুই শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। এ বিষয়টি নিয়ে আমি রিপোর্ট পাঠিয়েছি। একজন শিক্ষক ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। আগামী নভেম্বরে তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করবেন। আর হুলাসুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলমকে যোগাযোগ রাখতে বলেছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, বিষয়টিতে আমি অবগত নই। আমি তেঁতুলিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।